Skip to content

আর্ট মার্চ – কল্লোল সোম

‘সৃজ হে সৃজ, আর্ট —
চিত্র-কারু-মঞ্জুভাষ-রম্যধুন কনসার্ট;
আর্তনাদ, লুটিয়ে পড়ো সুরে ‘
নির্ঘুম রাতের তেল (হৃদয়ও) পুড়িয়ে,
এবং আত্মায় স্বপ্নচারী আততায়ীর
চিক্কণ ছুরিকাঘাত যুঝে,
রক্ত মুছে,
জেগে উঠে বললেন ফ্রীডরীখ্‌ নীট্‌শে;
‘নচেৎ মরো পিষে
ওহে মানবতা (মরবে ওমনিও তা) —
তোমার সত্যবাহী শকটের কালান্তক ভাঁড়ামির নীচে’
‘বাস্তব’-ছাঁদ শ্মশানের নির্মম আঁচে,
বড়জোর দুঃস্থ ছায়ায়, আনাচে কানাচে।

যেহেতু প্রজ্ঞান, ওম্‌কার ,
রক্তঝরা মরমের নিহিত দক্ষতা ;
মেনে নিয়ে তাই, উন্মীলনে,
বৃদ্ধ রক্তিম মানুষটির কথা –
সৃজন করেছি মাঠকে-মাঠ কত স্বর্ণযব,
রূপকের খাদ্য, ক্ষিদে ভুলে–
শস‍্যোপম শস্য, ফল ফসলের স্বপ্নসম্ভব।
ফুলে ফুলে গেছে দু’হাট হয়ে খুলে
ব্যগ্র দুই ঊরুর তোরণ তোমার
আঘাতে আঘাতে মত্ত মনমাধুরীর শীৎকার।

রভস গোঙানি ডুবিয়ে তুলেছি সুর,
কুয়াশাকুন্ডলী ছেড়ে সূর্যের ফণায় ওঠা
সব ধ্বণি, প্রাকৃত স্তনন—
পর্দা-হিজাবে ঢাকা আমারই শৃঙ্গার,
সুরদন্ডপাণি, আমি হ্বাগ্‌নার;
আমারই ‘সীগফ্রিদ্’-এ
‘লাইত্ মোতিফ্’-এর পরম গণিত মেনে
বেলাভূমির খোলা বুকে নুনশ্রান্ত সাগরজিভের
শান্তিহীন আছাড় পিছাড়।

সব বিনিশ্চয় ছেড়ে যে উদ্বেল সকালে
নির্ঘুম রাতের অঙ্গনিগ্রহ শরীরে মেলে,
দাঁড়িয়েছো এসে কঠিন তন্ময়, তুমি
আগাছাবিজড়িত আমার
অপরিমেয় স্বৈর নির্যাসে,
বেঁধেছি ধ্রুবপদ বিশ্বতানে, বকুলের ফাঁসে —
‘ভালোবাসি’, ভৈরোঁ-বিহানে।

অনন্ত জনন – কাব্য, আভাস,
ছলনা, গণনাতীত মিতহাস,
নিঃস্বপ্ন সারি সারি মাথার দেজা-ভ্যু
তুলোটে টেম্পারায় নীলামে উৎরিয়ে, তবু –
শেষরাতে চোখ মেলে দেখে নিস্তেজ মরুতারা
প্রতিকাব্যে তুলে এনে তাঁবুর অপূজ্য মলিন হর্‌রা
অন্যমনে নিকানর্ পার্‌রা —
শতকের ফিয়েস্তামুখর ট্যাভার্নে ঢুকে
ফিরিয়ে নেন —
মর্মভেজা শব্দ, রণন, রক্তপদছবি —
আপন ছায়ার কাছে পরাভূত কবি।
মার্গীয় কফির বিষতেতো মন্দাকিনী
বেয়ে স্খলিত শব্দের অপাচ্য মাছি, লোল কৃমি,
লবেজান অর্থের পিচ্ছিল ময়াল; কবিতার কায়েমী মাংস থেকে
মিটিয়ে তামাদি মজুরী তাদের
ছেড়ে দেন খান্ডবঅরণ্যে সরীসৃপ-আগুনকায়া,
খুঁটি উপড়িয়ে, তুড়েফুঁড়ে সার্কাসতাঁবু, মাথাজোড়া
বেলেল্লা কৃতী, সুরবেশর, লিরিকসর্জনের মায়া।

তবু, নিভন্ত অঙ্গার কে খুঁচে আবার ?
খড় পাতে, কেন্নোরঙা আগুন বরাবর
নিবু নিবু আত্মার মজলিশি নাগর – কে হে ?
ধ্বংস থেকে হাঁটকে কাঁথাকানি কুটো,
শ্যাওলা-লোমফোঁড়া-ইল্লতে ঢাকা
কোনও এক শাশ্বত ঠুঁটো
ভাগাড়ের বিড়ম্বিত প্রাণের ‘পরে চরা
বিমনা হাওয়ার ঘূর্ণী থেকে — খামচে ধরে আনে
বেমওকা কুমারী এক, দিনের শিকার।
শূণ্য আখরের কোমর বেড়ে শূণ্য পাতাতে
আন্দিয়ান হুয়ায়্‌নো নাচে বেদম মৌতাতে।

অনূঢ়া সাদা পাতাটির উন্নতিকল্পে,
সে না কি নিজেই হবে নভোযান আগামী গল্পে —
আশামুক্ত প্রতিভার দ্বীপে পাড়ি জমাবার
ডাক পড়েছে, অতুল দিগন্তে যেন তার
রক্ত-কারনেশন কবিতার।

3 thoughts on “আর্ট মার্চ – কল্লোল সোম”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।