Skip to content

আমি সব সময়ই তালব্য শ থেকেছি – সৌরভ আহমেদ

ছোটবেলায় ধানের বোঝা মাথায় তুলে দেওয়ার সময় বাবা আমার ছোটভাই রাকিবকে জিজ্ঞেস না করে আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, পারবি তো? নাকি পথের মধ্যে ফেলে দিবি।অথচ রাকিবের বোঝা ছিল বড়,প্রশ্নটা করা উচিৎ ছিল ওকে।
মোল্লাবাড়ির দীঘি সেচার পর সোহেল কাকার হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বড় মাথার শোল মাছটা এক ঘণ্টা খোঁজার পরও আমি পাইনি। কাদায় নামার বিশ মিনিটের মাথায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে শোল মাছটা রাকিব আবিষ্কার করে। রাকিবকে ফিরোজ মোল্লা সেদিন থেকে টার্জান বলা শুরু করেছিল।
খোকন স্যারের কাছে যখন প্রাইভেট পড়তাম, স্যার মাস শেষে নক করতেন, টাকাপয়শা আছে নাকি? থাকলে কাল নিয়া আসিস।অথচ দুই বছর পর একই বিষয় পড়তে স্যারের দারস্থ হয়েছিল রাকিব। কোনদিন স্যার টাকা চাননি।
শেকড়ের টানে বছরে দুইবার যখন বাড়িতে নোঙর ফেলি, তখন মাঠে-ঘাটে, রাস্তায়, চায়ের দোকানে, ব্রীজের ওপরে যেখানে যাই শুধু রাকিব আর রাকিব। দূর থেকে বয়োকনিষ্ঠরা বলে, উই যে রাকিব ভাইর বড় ভাই যায়। দেখেছেন চেহারাটা একেবারে রাকিব ভাইর মত, ঠিক না সজীব ভাই?
হস্তিশুণ্ড বাজারের মানিক শরীফের দোকানের সামনে থেকে হেঁটে মশিউর যখন ঈদগা মার্কেট যাচ্ছিল, মানিক শরীফ ওকে ডাক্তার সম্বোধন করে দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসালেন। খুব আন্তরিকভাবে সাথে কুশল বিনিময়ের পরে হাক দিয়ে চা দিতে বললেন।পাশে ওর সঙ্গী ছিলাম আমি। আমার দিকে মানিক শরীফ ফিরেও তাকাননি।
ঈদগাহ মার্কেট থেকে ফেরার পথে যখন হস্তিশুণ্ড হাইস্কুলের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, ঝড়ের মতন একটা হুনডা এসে আমাদের পাশে থামল। প্রিন্সিপালের ছেলে বদর কাকা আমাকে অবাক করে দিয়ে মশিউরের দিকে হ্যান্ডশেকের হাত বাড়ালেন। আমাকে শুধু বললেন, কেমন আছো? রাকিব আসেনি ঢাকা থেকে? ফজলে রাব্বি কোথায়?
সাতাশ রমজানের দিন জুমার নামাজের খুৎবা পাঠ শেষে জামাতে দাঁড়ানোর আগে আমার পাশে বসা মশিউরকে আব্দুল হাই মাওলানা বললেন, ডাক্তার তোমার সাথে কথা আছে, নামাজের পরে বোসো। সৌরভ না থাকলেও তুমি অবশ্যই থাকবে।
এভাবেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গৌন হয়ে যেতে থাকি। না হয়ে যেতে থাকি।পিঁপড়ার মত আমার অস্তিত্ব কাউকে বুঝতেই দেয় না, আমি একটা জীব। আমার ওজন আছে, আমার আকার আছে এবং আমিও স্থান দখল করতে পারি। চিরটা দিন আমি তালব্য শ থেকে গেছি। কোনদিন বার্নার্ড শ হতে পারিনি।

3 thoughts on “আমি সব সময়ই তালব্য শ থেকেছি – সৌরভ আহমেদ”

  1. বার্নার্ড শ হওয়ার কি দরকার। আপনি সৌরভ আহমেদ হবেন। নাম মানুষকে বড় করে তোলে না, বরং মানুষই নামকে জাঁকিয়ে তোলে। কবিতার শেষ অংশটি কবিতার ভাষা হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

অ্যাড ব্লক পাওয়া গেছে!!

সত্যি বলছি, আমরাও বিজ্ঞাপন পছন্দ করিনা! কিন্তু বিজ্ঞাপন এই ওয়েবসাইটকে বিনামূল্যে চালাতে সাহায্য করে! 

দয়া করে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করে পুনরায় লোড করুন।