Skip to content

আগে দাও ভাত বাবু ,পরে তুলো শ্রম — কৃষ্ণা দাস

আমি ভোলা, চুমকি ,আলি আর কালো,
সারা দিন কাজ করি, নেই কেউ ভালো।
বাবু দের বাচ্চারা স্কুলে যায় বেশ
হাসি খুশি উচ্ছল পরিপাটি ‘ড্রেস’।
আমাদের নেই বই, নেই ইস্কুল,
ছেড়া জামা, খালি পায়, কি রূক্ষ চুল!

চায়ের দোকানে বাবু খাই দাই থাকি,
কাজ করি সারাদিন, নেই কোনো ফাঁকি।
মার খাই, গাল খাই ,কানে দিই তালা,
পেটে বড় ভুখ বাবু, পেটে বড় জ্বালা।
মা মরা, বাপ খেদা, কোথা যাব বাবু?
খিদে বড় জ্বালা বাবু, খিদেতেই কাবু।
পিঠে ব্যাগ, পায়ে জুতো, স্কুলে যেতে লোভ,
এইটুকু ছাড়া আর নেই কোনো ক্ষোভ।

ভোলা ঐ গ্যারেজেতে রোজ গাড়ি ধোয়,
কালি ভুত হয়ে সে গ্যারেজেই শোয়।
ভুল যদি হয় কাজে চড় লাথি পায়,
তবু ভাল দুই বেলা পেট পুরে খায় ।
ভোলার যে বাপ কে ? নেই কারু জানা,
ফেলে গেছে মা তাকে যখন সে ছানা।
সেই থেকে গ্যারেজের এক কোণে থাকে,
মনে মনে রাত্তিরে ‘মা মা’ বলে ডাকে।

চুমকির মা আছে ,বাপও আছে বেশ,
ক্যানিং না কুলপি কোথা যেন দেশ।
বাপ তার নেশাখোড় গিলে থাকে মদ,
ধরে ধরে মাকে মারে ভীষণ সে বদ।
ঘরে নেই ভাত দানা, চালে নেই খড়,
বাপ বলে ‘পারবোনা, খুঁটে খেয়ে মর’।
দে গেছে বাবু বাড়ি টুকিটাকি কাজে,
ছি! ছি! কি লজ্জা! বাবু ওর বাজে।
চুমকির সারা গায়ে কামড়ের দাগ,
দেখে বাবু চন্ডাল ধরে যায় রাগ।
একদিন ঠিক তাকে খুন করে দেব,
চুমকির এক কথা ‘আমি মরে যাব’।

আলি, বাবু সারাদিন কুডায় কাগজ,
বিকেলে গুদামে তা জমা করে রোজ।
তার পর সন্ধ্যায় শেষ হলে দিন
নেশায় সে অজ্ঞান খেয়ে হেরোইন।
রাস্তার ফুটপাথে পরে থাকে লাশ,
শীতে কাঁপে, জলে ভেজে, বারোটা মাস।
গ্রামে ওর বাড়ি ছিল দামোদর তীরে,
ভাইবোন বাপ-মার আদরের ভিড়ে।
হাতে বাঁশি, চোখে আলো, ভালোবাসা ‘দিল’-এ।
হায়! হায়! সব নিলো দামোদর গিলে।
ভেসে গেল গ্রাম, বাবু ,ভেসে গেল ‘পতা’,
পেটের জ্বালায় শেষে এল কোলকাতা।
পেটতো ঠান্ডা হল মন হল কই?
হেরোইন তাই বাবু ,হেরোইন সই।

কালো বড় ভালো ছেলে রিক্সা টানে,
মনে মনে বাপ মাকে দেবতা মানে।
সুখের জীবন ছিল ওরও বাবু খুব,
দিন রাত খাতা বইএ দিত সে ডুব।
ক্যানোরিয়া জুট মিলে পড়তেই তালা,
সুখ শেষ, দুঃখের শুরু হল পালা।
বাপ-মার ক্যান্সার, ঘরে নেই আলো।
কাঞ্চন নাম তার হয়ে গেল কালো।
বই সব তাকে তুলে প্যাডেলেতে চাপ,
অষুধ আর ভাত চায় ঘরে মা-বাপ।
তবু আজও রাত্তিরে লুকিয়ে সে পড়ে
‘মাধ্যমিক’ স্বপ্নে রাত জেগে মরে।

এমনই হাজার কষ্ট বুকে নিয়ে রোজ
শৈশব ঝরে গিয়ে একে একে নিখোঁজ।
সরকারি নেতাদের মুখে শুধু স্লোগান,
ফেস্টুন ব্যানারে কত জয়গান!
আমরা শিশু শ্রমিক শুধু ভাত চাই,
শিশুশ্রম তুলে দিলে পেটে ভাত নাই।
আগে দাও ভাত বাবু ,পরে তুলো শ্রম,
পেট বড় যম বাবু ,পেট বড় যম।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।