Skip to content

উপন্যাস মানবিক (পর্ব সাত ) মল্লিকা রায়

নাইস টু মিট য়্যু মিঃ অম্বানী , আপনার অর্ডারটা এমাসে পাশ করানো গেল না সো সরি ! মিটিং শেষে একে একে প্রস্থাণ ভ্যর্সাটাইল ম্যানেজিং গ্রুপের । দুম করে লোডশেডিং কাজ হচ্ছে না শীততাপে পাশে বসা সেক্রেটারী মৃধা উঠে আপৎকালীন আলোর ব্যবস্থা করলেন , মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে দিমান , প্রচুর আশা ছিল । ” কি হল বসে থাকলে চলবে ” ? ওহ্ না চল, প্লিজ আমি পারছি না তুমি একা যাও দীমান । আরে না , আমি ভীষণ টায়ার্ড । গেলেও আমি কিন্তু গাড়ীতে থাকব ,বেশ ! বেড়িয়ে যায় দুজনে । গেটের কাছে নেমে মুখোমুখি ডঃয়ের , ” আসুন স্যর , সিগরেট প্লিজ “! ওকে থ্যঙ্ক য়্যু ! কেমন বুঝছেন ডঃ ? না ভয়ের কোন কারণ নেই , তবে মিসক্যরেজটায় একটু আপসেট ।হাঁটতে হাঁটতে ওয়ার্ডের সামনে এসে দীমানকে ভেতরে ঢুকতে ইঙ্গিত করে সরে যান সুপারের কেবিনে । ‘ গুড আফটারনুন স্যার আপনার সাথে দেখা করতে চলে এলাম , ‘ খুব ভাল করেছ ‘ সিট ডাউন মাই বয় , আজকের কাগজ পড়েছো ?’ এক ঝলক ‘, কি বুঝছ ? ‘ খুব খারাপ স্যার, দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগেই আছে , পরিস্থিতি খুব খারাপ ।প্রশ্রয় চলছে হিংসার রাজনীতির, পঠন পাঠন শেষ বললেই চলে ,যুব সমাজের একাংশ যৌন জ্বরাক্রান্ত ,মুষ্টিমেয় কিছু ক্ষমতাসীনের হাতে প্রচুর অর্থ তাদের কারো প্রতি না আছে কোন দায় না দায়িত্ব শুধু আখের গোছানোর প্রচেষ্ঠা । এমত পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আপনি আমি কোন মার্কসকে আনতে চাইছি স্যর ? যেখানে নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরগুলিতে বেকারের আর্তনাদ ঠেলে দিচ্ছে কু কর্মে , আমরা ওদেরই পরে ঠেলে দিচ্ছি সন্ত্রাসবাদের দলে । আমাদের তৈরী এ একপেশে সমাজব্যবস্থা থেকে এর অধিক সৌজন্য আমরা আশা করতে পারি কি ? ‘ তুমি ঠিকই বলেছ দীমান , এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে তোমার আমার পথে নামা প্রয়োজন ,বৃহৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সমস্যার আসল সমাধান সম্ভব।” কিন্তু আমাদের কাছে না আছে বাদল না দীনেশ গর্জে ওঠা সেই তরুণ যুবক আজ অপমানে ,লাঞ্ছণায় ধৈর্যহারা , কে দেখাবে পথের দিশা “? ভাঙনের খেলায় আমরা উন্মত্ত রাষ্ট্রে ,দেশে,সমাজে,মানুষে,ধর্মে,পরিবারে এই অদ্ভুত ভাঙণ অন্য কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব ? ভাঙতে ভাঙতে আমরা কোথায় চলেছি স্যার ? মুখে বলছি,” বিবিধের মাঝে ঐক্য ,কিন্তু সত্যি কি আমরা ভাল আছি ? কফি নিয়ে রাজার প্রবেশ ,” টিফিন কি খাবেন স্যার” ? “যা হোক্ হালকা করে কিছু নিয়ে এস”, পরক্ষনেই দুটো স্ন্যক্স,দুটো ওমলেট সহ রাজার প্রবেশ ,” আজ কিন্তু স্প্যেশ্যাল ,অামার নিজ হাতে তৈরী ” একগাল হাসি ।” কপালে হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে দুচোখ মেলে পর্ণা , ” কখন এলে “? এইতো ! আমি ডঃ স্মিথের সাথে ডিটেল আলোচনা করলাম , মাসখানেক রেস্ট নিলেই তুমি চাঙ্গা ,কিন্তু আমার সন্তান ? ও আবার হবে ! যদি না হয় ? শুরু হল তোমার অলক্ষুনে কথা ?আমার ভয় হয় ! যদি আমি আর মা না হতে পারি? তোমার মাথাটায় কি গোবর আছে ? এরকম ভাবছো কেন ? তাছাড়া আমি আছি ডঃ স্মিথ আছেন তোমার ভয়ের কি আছে ? অসুধগুলো ঠিকমতো খাও , নাহলে সুস্থ হবে কি করে ? ঘরে ঢোকেন স্মিথ্ ,” কেমন দেখছেন স্যর ” ?সে তো আপনি বলবেন , এখন ওর একমাত্র ভরসা আপনি । হোয়াট ড্যু য়্যু মিন ?আরে চটছেন কেন ? আমি বলছি ডঃ হিসেবে আপনার মত বন্ধু পেয়ে আমি অনেকটা নিশ্চিন্ত । ওকে ! বাট এটা মনে রাখবেন মিঃ অম্বানী এ্যম নট ইওর ফ্যমিলি মেম্বার , ওকে ? ছি ছি নট এ্যাট অল ! দু হাত চেপে দীমান কৃতজ্ঞতা জানায় ডঃ স্মিথকে । আচ্ছা মিঃ অম্বানী মনে হল বাইরে গাড়ীতে এক ভদ্রমহিলা ওয়েট করছেন যদি কিছু মনে না করেন ভেতরে ডাকি ? পর্ণার দিকে তাকিয়ে , দরকার নেই চলুন আমরা বরং বাইরে যাই । ফাল্গুনের পশ্চিমাকাশে সূর্যের ঢল আকাশে অদ্ভুত রংয়ের তুলির প্রলেপে মানুষের মুখগুলোয় অদ্ভুত এক পরিবর্তনের আঁচ পায় প্রত্যুষ , সমুখের লনে ঠাসাঠাসি ভীড়ে ওদের শৈশবের চাহনি বড় অসহায় লাগে ডঃরের । কারো পরিজন,কারো আত্মজন , কারো বান্ধব প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকের এক অদ্ভুত সহমর্মিতার সহাবস্থাণ এক অদ্ভুত আভ্যান্তরীণ প্রতিফলন ঘটায় হৃদয়ের গভীরে । এ এক বিরল অভিজ্ঞতা ,বিষেশত জীবনের আনন্দঘন ও বিয়োগ সংক্রান্ত সময়গুলিতে এ ধরণের সৌহার্দ্যবোধ মনে করিয়ে দেয় সুখ,দুঃখের মাঝামাঝি কেবলই প্রচেষ্টা , সেখানে মুষ্টিমেয় কিছু কথা,সামাজিক মোড়কে ঢেকে শুধু আপ্রাণ দর কষার খেলা । কি অদ্ভুত এই মানুষ প্রজাতি ! সন্ধ্যা আগত প্রায় চতুর্দিক ধীরে শান্ত,সমাহিত হয়ে উঠবে কেউ হতাশা কেউ প্রত্যাশা নিয়ে ফিরে যাবে পৃথিবীর নির্জন কক্ষে । কিছুক্ষণের হাসি কান্নার রেশ ফুরিয়ে আবার ফিরবে তারা স্ব স্ব অবস্থাণে । ” আমি বলছিলাম ডঃ মাথার স্টীচটা কাটার পর ওকে যদি আমি বাড়ী নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাই আপত্তি আছে ” ? ” না , আপত্তি থাকবে কেন ? তাছাড়া বাড়ীতে ভালো ব্যবস্থা থাকলে অসুবিধার কিছু তো নেই” । ” বেশ আমি তাহলে ওই ব্যবস্থাই করব কেমন , চামেলী ওকে খুব ভাল দেখাশুনা করতে পারবে , আমিও আছি ‘ ” হ্যাঁ সেই ভালো ” । ” আসলে স্যর এই যে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই অদ্ভুদ এক অভ্যাসে আসক্ত , যখন যেমন মন যা সায় দেয় সেইভাবে নিজেকে গড়তে ব্যস্ত , কেন যেন আমার মনে হয় নিজেরই অজ্ঞাতে আমরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলি, মিলিয়ে ফেলি এক অজানা আবর্তে , কতটুক সমৃদ্ধি আছে বা নেই তার টানাপোড়েনে খাবি খেয়ে ছিটকে বেড়িয়ে যেতে চাই নৈমিত্তিক ব্যাসার্ধ থেকে। ভাবি সমৃদ্ধ হলাম ! আদৌ কি তাই ” ? বাইরের প্রশস্ততা হৃদয়ে অনুভব করার জন্য বিশালতর দ্বার উন্মুক্ত করে ছড়িয়ে পড়তে হয় মানুষের মধ্যে, পথে প্রান্তরে, যত নিজেকে ছড়িয়ে দেবে তত সমৃদ্ধ হবে জ্ঞানভান্ডার । যত বিস্তার তত অভিজ্ঞতা ,তত সমৃদ্ধি, পৃথিবী অহরহ ডেকে চলেছে , এস মানুষ আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দ্যাখো কত কাহিনী,কত ঘটনা,কত ইতিহাস তুমি গ্রহণ কর এর নির্য্যস , বুক পেতে দাঁড়াও মহামানবের তীরে অবগাহন কর এই সপ্তমাশ্চর্যের অথৈ সাগরে সেঁচে নাও মনিমাণিক্য ,রত্নসম্ভার । তুমি মহামনব হয়ে ওঠ । ” ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হয়ে এল এবার ফেরা যাক” ” ওহ সরি অ্যাম টোট্যালি ইমোশনালড্ ,অদ্ভুত শান্ত চারিধার একে একে ঘরে ফেরে ক্লান্ত জগৎ, সন্ধ্যা নামে চত্ত্বরের বুকে জড়িয়ে ধরে প্রকৃতিকে , হিমেল বাতাসের স্পর্শ্বে কিছুটা হালকা হয় মন । দীমান এগিয়ে চলেছে মন্থর গতিতে। গাড়ীতে বসা মহিলা নেমে এগিয়ে এসেছেন কাছাকাছি ,অল্প আলোয় পরিষ্কার না হলেও সুন্দরী না ভাবার কোন কারণ নেই । তবে হাবভাব বেশ চৌখস ,অন্তত দেখে তো তাই মনে হয় । তবে খানিকটা বিরক্ত মনে হল,চারপাশে আলো জ্বলে ওঠে আর তাতে স্বচ্ছ হয় মহিলার প্রতিচ্ছবি । ” কি ব্যপার ? ক’টা বাজে খেয়াল আছে ? আমার আবার শপিং মলে মার্কেটিং আছে “,মৃধার বিরক্ত কন্ঠস্বর । “ওহ্ চলি ডঃ কাল আসব” । “ঠিক আছে” । মিলিয়ে যায় গাড়ীর লাইট, হঠাৎ দপ্ করে নিভে যায় পর্ণার ওয়ার্ডসহ আরও কয়েকটি রুমের অালো, এদিক ওদিক ত্রস্ত দৌড়াদৌড়ি , ছুটোছুটির কিছুক্ষণ পরে জ্বলে ওঠে আাবার। অঘোরে ঘুমোচ্ছে ও ,কেবিনের নার্সকে ডেকে খাওয়া শোওয়ার ঠিকঠাক নজর রাখার কথা বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ান দীমান । ঘড়িতে সবে আটটা সুপার ডঃ চ্যাটার্জী উঠে দাঁড়ালেন চেয়ার ছেড়ে,চুরুট ধরালেন , দরজা বন্ধ করে বাড়ীর পথে মুখোমুখি দীমানের,”তুমি কি এখন বাড়ীর দিকে “? ” না স্যর , একেবারে কাল ” “খাওয়া দাওয়া “? ” ক্যন্টিনে ” ” ওকে ওকে মাই বয় , আজ আমার বড় ক্লান্ত লাগছে , নাহলে কিছুটা সময় গল্প করা যেত ” ” বেশ কাল হবে ” ” ওকে গুড নাইট ” ।

মন্তব্য করুন